শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

ইমিগ্রেশন নিয়ে টানাটানি

ইমিগ্রেশন নিয়ে টানাটানি

স্বদেশ ডেক্স: দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। বর্তমানে স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব পালন করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এবার এ দায়িত্ব বুঝে নিতে চাইছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

তাদের দাবি, সব আইনে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম বলতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে বোঝায়। সরকারের একটি নির্বাহী আদেশে এসবি এ দায়িত্ব পালন করছে। আইন অনুযায়ী ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব চায় প্রতিষ্ঠানটি। ই-পাসপোর্ট এবং ই-গেট চালু হলে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের কর্মীরা এটি পরিচালনা করবেন।

সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণ করে কাজের সমন্বয়ের জন্য ইমিগ্রেশন কার্যক্রমের দায়িত্ব ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর নিতে চায়। অধিদপ্তরটির এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, আইনবিধি মেনেই তারা ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব পালন করছে। এখন দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছে না। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বর্তমান জনবল এক হাজার ১৮৪।

গত কয়েক বছর ধরে অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রাম পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা চালিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৪ অক্টোবর ২ হাজার ৯৫৩টি পদ নতুন করে সৃজনসহ একটি চাহিদাপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায় অধিদপ্তর। এর মধ্যে ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব ফেরার জন্য ৮২১ জন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার পদ সৃজনের সুপারিশ করা হয়েছে।

যাচাই-বাছাই শেষে গত জুন মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২ হাজার জনবলের অনুমোদন দিয়ে ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। বর্তমানে সেটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বাদ দেওয়া হয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ৮২১টি পদ। পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের এমন কার্যক্রমের প্রেক্ষাপটে গত ৫ জুন রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ক্যাপ্টেন ফজল মাহমুদ পাসপোর্ট ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হয়ে কাতারে যান। সেই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

গত ১৭ জুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। ওই প্রতিবেদনে বিভিন্ন সুপারিশের একটি ছিল, ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব এসবির পরিবর্তে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের হাতে ন্যস্ত করা। এর পরই আলোচনায় চলে আসে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম কার হাতে থাকছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৪ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ অধিদপ্তরের অর্গানোগ্রামে পুনরায় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার পদ যুক্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

বর্তমানে ফাইলটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম আমাদের সময়কে বলেন, ‘কী সুপারিশ করা হয়েছে সেটির অ্যাকশন শুরু হলেই দেখতে পাবেন।’

নাগরিকদের বিদেশে যাতায়াতে সহায়তা করতে ১৯৬২ সালে একটি পরিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন একটি সংস্থা। অন্যদিকে এসবি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির গাইডলাইন অনুসারে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) দেওয়ার কাজ শুরু করে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ২,৪০,৫৮,৬৮০টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) ও ১২,৫৫,৬১২টি মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) মুদ্রণ করে সংস্থাটি।

২০১১ সালের ১৬ আগস্ট সরকারের এক নির্বাহী আদেশে ঢাকায় আগমনী ভিসা (অন অ্যারাইভাল ভিসা) প্রদানের কার্যক্রম শুরু করে এসবি। এর আগ পর্যন্ত ঢাকায় আগমনী ভিসা প্রদান করত ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিষ্ঠানটির একটি ভিসা বুথ রয়েছে। কিন্তু এসবিকে এই দায়িত্ব হস্তান্তরের পর দ্বৈত কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির আশঙ্কায় ভিসা বুথের কার্যক্রম স্থগিত করে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর।

অধিদপ্তরের দাবি, বর্তমানে তাদের ভিসা বুথটি তালাবন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। আমাদের সময়ের পক্ষ থেকে লিখিত প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় দেড়শ বছর ধরে ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব পালন করে আসছে পুলিশ। বর্তমানে এসবির পাঁচ হাজারের বেশি পুলিশ অফিসারের মধ্য থেকে দৈহিক, মনস্তাত্ত্বিক, সার্ভিস রেকর্ড যাচাই-বাছাইপূর্বক দক্ষতার বিশেষ মানদ-ে উত্তীর্ণ সদস্যদের দীর্ঘমেয়াদি বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়।

দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের ৯৪৪ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের ইমিগ্রেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন, ১৯২০ সালের পাসপোর্ট আইন, ১৯৩৯ সালের রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স আইন, ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স আইন, ১৯৫১ সালের ফরেনার্স অর্ডার, ১৯৫২ সালের কন্ট্রোল অব এন্ট্রি আইন, ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অর্ডার, ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, এসব আইনে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে পুলিশের কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে।

অন্যদিকে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি, পুলিশ যেসব আইনের বরাত দিয়েছে, সেসব আইনে কেবল তল্লাশি, জব্দ ও আটকের বিষয়ে বলা হয়েছে। আগমনী ভিসা প্রদানের মতো কার্যক্রমকে মূলত ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে বোঝানো হয়েছে। পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে ১৯৭৩ সালের পাসপোর্ট অর্ডার আইন ও ১৯৮২ সালের মার্শাল ল’কে মূল গাইডলাইন মনে করা হয়।

কিন্তু এই দুটি আইনে পুলিশকে বন্দরগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছাড়া ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি মো. সোহেল রানা আমাদের সময়কে বলেন, ‘ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনায় অবদান রাখার পাশাপাশি ইমিগ্রেশন পুলিশ দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, মানবপাচার, মাদক ও জঙ্গি-সন্ত্রাসী শনাক্ত এবং ইমিগ্রেশন পুলিশের তথ্যভা-ার থেকে সংস্থাগুলোকে তথ্য সরবরাহ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’

এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শিহাব উদ্দিন খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এমআরপি চালুর পর্যায় একটা সফটওয়্যারের আওতায় কার্যক্রম পরিচালনা হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় এসবি এমআরপি সফটওয়্যার ব্যবহার না করার ফলে সমস্যা হচ্ছে। কে যাচ্ছে আসছে সেই তথ্য আমাদের ডাটাবেজে থাকছে না। এখন যেহেতু ই-পাসপোর্ট চালু হতে যাচ্ছে এবং ই-গেট বসানো হয়েছে।

যেহেতু আমাদের লোকজনকেই এ কাজটি করতে হবে সামগ্রিক বিবেচনায় একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করালে পারফেক্টলি করা সম্ভব হবে। তথ্যটা কেন্দ্রীয়ভাবে থাকলে কে কখন গেলেন আসলেন সব তথ্য থাকার ফলে ওভার স্টে করার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877